রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লা দেবিদ্বারে লিচু খাওয়ানোর প্রলোভনে সাত বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত কথিত ‘ভণ্ডপীর’ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইন (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থাটি জানিয়েছে, খণ্ডকালীন শিক্ষকতা বাদ দিয়ে সহজে উপার্জনে পীরের বেশ ধরে তিনি দীর্ঘ দিন যাবত লোক ঠকিয়ে আসছিলেন। একই সঙ্গে আস্তানা গেড়ে মাদকসেবনসহ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নানা আসামাজিক কাজকর্ম। রোববার দিবাগত রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ সোমবার র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গ্রেপ্তার ইকবালের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুই জুন ইকবালের আস্তানায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি পালিয়ে এসে ঘটনাটি তার পরিবারে জানায়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে শিশুটির পরিবারে হুমকি দেন। পরে ছয় জুন শিশুটির মা থানায় মামলা দায়ের করলে তিনি আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।
প্রথমে কক্সবাজার ও পরে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপনে থাকেন। সবশেষ তিনি স্থান পরিবর্তন করে রাজধানীর মিরপুরে তার এক পরিচিতের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে মঈন জানান, ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ থেকে স্মাতক পাশ করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন। স্থানীয় লোকজন তাকে প্রফেসর বলে ডাকতো। এক পর্যায়ে তিনি স্থায়ী কোনো চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করেন। পরে তার বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে পীরের লেবাস ধারণ করে নামের শেষে শাহ সুন্নি আল কাদেরী উপাধি যুক্ত করেন। তিনি ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এলাকার স্থানীয় লোকদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছিলেন।
মঈন জানান, ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পীরের মুরীদ এবং স্বনামধন্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রতারণা করে আসছিলেন। এই উদ্দেশে বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলেন। তার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্থ করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে ধর্মীয় বিষয়ে বক্তব্য দিতেন। তিনি আস্তানার বাহিরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতেন। তার আস্তানায় আগত লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ করতো।
মঈন জানান, এর আগে ইকবাল বেশ কয়েকবার অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত থাকা অবস্থায় স্থানীয়া তাকে আটক করে। পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অঙ্গিকারনামা দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পায়। তার অন্ধ ভক্তরা তাকে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ, গবাদী পশু ইত্যাদি দিতেন। যা তিনি নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতেন।
তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।